তুরস্কে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ওমেনঅাই: তুরস্কে ২০ বছর বয়সী এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যার প্রতিবাদে নারীদের শুরু করা বিক্ষোভ আরও তীব্রতর হচ্ছে। দেশটির নারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের যৌন হয়রানির ঘটনা প্রকাশ করে এর প্রতিকার দাবি করছেন। খবর আলজাজিরার।
তুরস্কজুড়ে গত সোমবার হাজার হাজার নারী কালো পোশাক পরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ বিক্ষোভে শরিক হয়েছেন স্থানীয় অনেক নারী সেলিব্রেটিও। রাজপথে বিক্ষোভের পাশাপাশি ফেসবুক, টু্ইটার নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেও প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছেন তারা।
ইতোমধ্যে ফেসবুক ও টুইটারে কয়েক লাখ লোক এ প্রতিবাদের প্রতি নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি অনেক নারীই তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেছেন।
তুর্কি অভিনেত্রী বেরেন সাত টুইট বার্তায় তার জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনার পর পরই ইন্টারনেটে তা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর অনেক নারীই তাদের যৌন হয়রানির শিকারের ঘটনা বর্ণনা করেন।
বেশ কয়েকজন তাদের শিশু বয়সে ধর্ষণের শিকার ও পাবলিক প্লেসে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানান। অনেকে জানান, তারা অফিস বা অন্য কোনো স্থানে যৌন হয়রানি থেকে বাঁচতে ভুয়া বিয়ের আংটি ব্যবহার করে থাকেন।
এদিকে বাসচালকের হাতে নিহত ক্যাগ ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ওজজেকান আসলানের পরিবারের সদস্যদের ফোনে সমবেদনা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, একটি মিনিবাসের শেষ যাত্রী আসলানকে ধর্ষণের চেষ্টা করে বাসটির ২৬ বছর বয়সী চালক। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাত ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আসলানকে হত্যা করে ওই চালক।
ওই ঘটনার পর অভিযুক্ত চালক তার বাবা ও বন্ধুকে সহায়তার জন্য ডাকে। তারা ‘ডিএনএ’র নমুনা ধ্বংসে’ মেয়েটির দুই হাত কেটে দেয় ও দেহ পুড়িয়ে নদীতে ফেলে দেয়।
এ ঘটনার পর গত বুধবার মেয়েটির নিখোঁজের ব্যাপারে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়। পুলিশ গত শুক্রবার মার্সিন নদীতে মেয়েটির লাশ খুঁজে পায়।
এরপরই দেশটির নারীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ, অভিযুক্তদের শাস্তি ও নারীদের ওপর যৌন হয়রানি বন্ধের দাবিতে রাজপথে নেমে আসে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশটির মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নারীর ওপর সহিংসতা চালানোর অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পুনর্বহালের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন। দেশটিতে ২০০৪ সাল থেকে নারীর ওপর সহিংসতায় মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি স্থগিত রয়েছে।
দেশটির একটি গণমাধ্যম ভিত্তিক সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৪ সালে দেশটিতে অন্তত ২৮১ নারী পুরুষের হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন। ১০৯ নারী ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন। পুরুষদের আক্রমণে আহত হয়েছেন ৫৬০ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৪০ নারী।
দেশটির একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, গত বছর পুরুষের হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন ২৫৭ নারী। যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৮২ জন। সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৫৭৫ নারী।
ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি (ওমেনআই)/এসএল/