জাকসু নির্বাচন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই: ড. ফারজানা ইসলাম

ওমেন আই :
অধ্যাপক ড.ফারজানা ইসলাম। দেশের প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে গত রবিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাস হয়ে রইলেন। ১৯৫৮ সালে ঢাকায় জন্ম নেন তিনি। পৈতৃক নিবাস শরিয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার আরশিনগর গ্রামে। ২৮ বছর ধরে এ ক্যাম্পাসের নৃবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করছেন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ও দেশের প্রথম নারী উপাচার্যের সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন— নাজমুল হক জেনিথ
আমার পড়াশোনা
ঢাকার রমনা এলাকায় আমার জন্ম। ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুলে মাধ্যমিক এবং বদরুন্নেসা মহিলা কলেজে মানবিক শাখায় উচ্চমাধ্যমিক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করি।
শিক্ষকতা পেশায় যেভাবে
১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি। ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক
শিক্ষার্থীরা কি চায় তা বুঝতে হবে। তারা কি জানে, আর কি জানে না তাও অনুধাবন করতে হবে। আমিও একজন শিক্ষার্থী। শেখার উদ্দেশ্যে আমিও তাদের কাছে যাই এবং শিখি।
দায়িত্ব পেয়ে প্রথম পদক্ষেপ
দল মত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়কে সচল করার উদ্যোগ নেয়া হবে। আমাদের ক্যাম্পাস সম্পর্কে দেশে এবং দেশের বাইরে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে তা পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হব।
যে বিষয়ে গুরুত্ব দিবো
শিক্ষার গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত একাডেমিক কাউন্সিল বৈঠকের ব্যবস্থা করব। দলমত নির্বিশেষে যত দ্রুত সম্ভব সবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করব। একই সঙ্গে বিভাগ, অনুষদ, ইনস্টিটিউট ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে তাদের পরামর্শকে গুরুত্ব দেব।
প্রথম নারী উপাচার্য
আমি শুধু নারী কিংবা পুরুষ হিসেবে নয় বরং মানুষ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠিন সময়ে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এক্ষেত্রে মহামান্য আচার্য এবং প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে তারা জাতির জন্যে বিশেষ করে নারীদের জন্য নতুন অধ্যায় শুরু করেছে।
ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিয়ে
প্রতিটি ছাত্রসংগঠনের ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলে গঠনশীল ভাবনার দিকে এগিয়ে যাব।
জাকসু নির্বাচন নিয়ে
আমাকে কিছু সময় দিন, তারপর বিষয়টা নিয়ে আমি প্রশাসনের সবার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তবে এটাকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
আপনার পরামর্শ
পরামর্শ একটাই— পড়াশুনা করতে হবে। পড়াশুনার বাইরে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবে। তবে পড়াশুনাটাই মুখ্য হওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষার্থী সুলভ আচরণ প্রত্যাশা করি। বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে উন্নতি এবং গৌরবময় মর্যাদা ফিরে পাবে সেক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদেরও দায়িত্ব পালনের জন্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
নারী শিক্ষা
উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। সকল শিশুকে অন্ততপক্ষে মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো উচিত। তাদের দিকে পজেটিভ হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। ইতোমধ্যে রাষ্ট্র তা শুরু করেছে তবে এটা আরো সম্প্রসারণ করতে হবে।
নারী অধিকার
নারীদের স্বার্থ এক নয়, তাদের মধ্যেও পার্থক্য আছে। সমাজ ভেদে তাদের চাহিদারও পার্থক্য আছে। দলিত নারীরা অর্থাত্ যারা সমাজে নিম্ন শ্রেণী হিসেবে চিহ্নিত সেই নারীদের বিভিন্ন স্বার্থ চিন্তা করতে হবে। সমাজে যে তাদের অভিন্ন চাহিদা আছে তা পূরণ করতে হবে।