সাত নারী উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

নুসরাত জাহান আরা
জন্মসূত্রে কাশ্মিরের অধিবাসী নুসরাত জাহান আরা, ফুল বিক্রির জন্য একটি দোকান দেন যার নাম ছিল ‘পেটালস এন্ড ফার্ন’। এর আগে ২০১০ সালে কম্পিউটারে গ্রাজুয়েট এই নারী, সরকারি চাকরি ছেড়ে তাঁর পৈত্রিক বাড়ীতে ফুল চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি কেবল মাত্র একটি কোম্পানি পরিচালনাই করছেন তা নয়, বরং কাশ্মির উপত্যকায় ফ্লোরাকালচার সেক্টরকে পুনরুজ্জীবিত করছেন। তাঁর সমস্ত পুঁজি ফুলের দোকানে বিনিয়োগ করে বর্তমানে নুসরাত তিনটি ফুলের খামার এবং একটি খুচরা বিক্রয় কেন্দ্রের মালিক। তার প্রতিষ্ঠানে বিশজন শ্রমিক কাজ করে এবং এই ফুলের ব্যবসা থেকে বছরে তার প্রায় দুই কোটি রুপি আয় হয়। এছাড়া তার কাশ্মির এসেন্স নামে একটি খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে যেখানে নানা ধরনের কাশ্মিরী পণ্য যেমন জাফরান, চেরী, কাজু বাদাম, এপ্রিকট, আপেল ইত্যাদি পাওয়া যায়।
চিন্নি সোয়ামি
২০০১ সালে চিন্নি সোয়ামি ও তার স্বামী, দেহরাদুন এবং মুসরির মাঝামাঝিতে অবস্থিত উত্তরাখন্দ এর পুরকাল গ্রামে আসেন এবং স্থায়ী ভাবে থাকতে শুরু করেন। শুরুতে চিন্নি সোয়ামি পার্শ্ববর্তী গ্রামের শিশুদের শিক্ষা দেয়া শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে আরো অর্থপূর্ণ কিছু করার উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে চিন্নি সিদ্ধান্ত নেন। নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এরপর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্ত্রী শক্তি’। এখানে নারীদের টেক্সটাইল পন্য বানাতে সাহায্য করা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে—কম্বল, কুশন কভার ,ব্যাগ, মহিলাদের শাল এবং আরো আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয় জিনিস। পুরকাল গ্রাম এবং এর আশপাশের ১৫ গ্রামের নারীদের তিনি এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়েছেন।
কমল কুম্ভার
মহারষ্ট্রের ওসমানাবাদে জন্ম নেয়া নারী কমল কুম্ভার ছিলেন একজন দিনমজুর। বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পর তিনি ঘুরে দাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৪ সালে মাত্র ২,০০০ রুপি নিয়ে একটি পোল্ট্রি ফার্ম এবং ’একতা প্রডিওসার কোম্পানি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। ক্ষুদ্র-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে তিনি তাঁর গ্রাম ও তার আশপাশের প্রায় ৫,০০০ নারীকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বর্তমানে, তিনি ৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং তাঁর মাসিক আয় কমপক্ষে এক লক্ষ রুপি।
জিনিয়া খুমুজাম
নিজের চার সন্তানের জন্য হাতে বোনা উলের ব্লাউজ, মৌজা এবং গ্লোভস তৈরির মধ্য দিয়ে জিনিয়া খুমুজাম সৃজনশীল কাজ শুরু করেছিলেন। মনিপুরের জিনিয়া খুমুজাম তারপর আরেকটি কাজ করা শুরু করেন আর তা হল ‘হারবাল সাবান’ তৈরি । বর্তমানে, ৬৬ বছর বয়সী এই উদ্যোক্তা ‘মঙ্গল’ নামে নানা ধরনের সাবান বিক্রি করছেন।
প্রথমদিকে তিনি সাবানের কাঁচা মাল হিসেবে শসা এবং লেবু ব্যবহার করতেন এবং পরবর্তীতে এল্যোভেরা, নিম, হলুদসহ অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করা শুরু করেন। শুধু স্থানীয়দের মধ্যেই নয় বিদেশী পর্যটকদের কাছেও সমান জনপ্রিয় এই হারবাল সাবান। এই ব্যবসা থেকে তিনি মাসে প্রায় ১০ হাজার রুপি আয় করেন যদিও পর্যটন মৌসুমে এর পরিমান আরো বৃদ্ধি পায়। অনলাইনেও বিক্রি করা হয়ে থাকে এই সাবান।
মেহভিস মোস্তাক হাকাক
২০১৩ সালে ২৫ বছর বয়সী মেহভিস মোস্তাক হাকাক ‘ডায়াল কাশ্মির’ নামে তার প্রথম অ্যাপ চালু করেন। তার এ অ্যাপ হচ্ছে একটি নির্দেশক (ডিরেক্টরি) যা থেকে ফোন নাম্বার, ইমেইল, রাজ্যের ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পোস্টাল ঠিকানা এবং গুরুত্বপূর্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা প্রদান করে থাকে। এই ডিরেক্টরির আরেকটি সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে পিন কোড, ট্রেনের সময়সূচি জানা যায় এবং এতে ছুটির দিনের তালিকা রয়েছে।
নেহা জুনেজা
ভারতে গ্রামের নারীদের রান্নার প্রথাগত পদ্ধতি থেকে বের করে আনার চেষ্টায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ‘গ্রামীন ইনফ্রা’ এর সিইও এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা নেহা জুনেজা। তিনি স্মার্ট চুলার ডিজাইন করেন যা শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত ধোঁয়া রোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এ চুলা গ্রামের সাধারন চুলার তুলনায় শতকরা ৬৫ ভাগ জ্বালানী সাশ্রয় করে থাকে।
রিভাথি কুলকারনি রায়
মুম্বাইয়ের রিভাথি কুলকারনি রায় ২০০৭ সালে চালু করেন ‘ফর সি’, যা এশিয়ায় নারীদের জন্য সর্বপ্রথম ট্যাক্সি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ২০১০ সালে চালু করেন ‘ভিরা’ এবং ’হেই দিদি’। এ দু’টি প্রতিষ্ঠান নারীদের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সরবরাহে নিয়োজিত। গত দশ বছরে মুম্বাই এবং দিল্লীর ১,০০০ এরও বেশী নারী বিভিন্ন বিষয়ে এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। রিভাথি বলেন, “এমন এক সময় ছিলো যখন এই উপমহাদেশে নারীদের জন্য কোন ক্যাব সার্ভিস ছিলোনা। ফর সি নারীদের জন্য ৯০ দিনের এক কোর্সের আয়োজন করে যেখানে নারীদের আত্নরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওযা হয়ে থাকে।”