সিভিতে যে ৯টি ভুল করলে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকই পাবেন না

ব্যাকরণগত ভুল ও টাইপিং মিসটেক
সিভিতে ভুলের কোনো স্থান নেই। ২০১৩ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ৫৮ ভাগ নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান সিভিতে টাইপিং মিসটেক নির্ণয় করে এবং এসব চাকরিপ্রার্থীকে বাদ করে দেয়। বর্তমান কম্পিউটারের যুগে টাইপ ও গ্রামার ভুল ঠিক করা খুবই সহজ। তার পরেও যারা এসব ভুল করে তাদের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন কঠোর হচ্ছে। এছাড়া যেসব বানানের ভুল খুব সাধারণ, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে your/you’re ও lose/loose. এছাড় business ও finance বানান প্রচুর ভুল হয়। এছাড়া কমার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, স্পেল চেকারের ওপর সবসময় ভরসা রাখা যাবে না। তার বদলে পুরো সিভিটি একবার পড়ে দেখতে হবে।
ভুল তথ্য দেওয়া
আপনার সিভিতে দেওয়া সামান্য ভুল তথ্যও অনেক সময় আপনার চাকরি না হওয়ার কারণ হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে কোনো ভুল ফোন নম্বর দেওয়া। বা জব ডিটেইলস ও তারিখে ভুল করা। নিয়োগকারীকে আপনি বলছেন যে, আপনি নিখুঁতভাবে এসব কাজ করতে পারেন কিন্তু বাস্তবে সিভিতেই ভুল করলেন, তাহলে তারা কোন যুক্তিতে আপনাকে চাকরিটি দেবে? এমনকি সিভিতে দেওয়া সেই ভুল তথ্য প্রথমে ধরা না পড়লেও নিয়োগের আগে তা ধরা পড়লে চাকরির তালিকা থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
অনেক প্রতিষ্ঠানকে একই সিভি দেওয়া
এ বিষয়টি অনেক চাকরিপ্রার্থীই জানেন না। কিন্তু আপনি যদি একই সিভি সব চাকরির আবেদনে দিতে থাকেন তাহলে তাতে চাকরি হওয়ার সম্ভাবনা সত্যিই কমে যায়। দুটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিঃসন্দেহে ভিন্ন ভিন্ন পদে, ভিন্ন কাজের মানুষ দরকার। তাদের সবাইকে আপনার একটাই পুরনো সিভি দিলে তা তাদের নিকট আকর্ষণীয় হবে না। এক জরিপে দেখা গেছে, ৩৬ ভাগ প্রতিষ্ঠান সিভি একজাতীয় হওয়ার কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ দিয়ে দেয়। এর প্রতিকার হিসেবে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে সিভি দেওয়ার আগে তাদের দেওয়া চাকরির বর্ণনা থেকে নিজের সিভিকে নতুন করে সাজিয়ে নেওয়া।
অতিরিক্ত ডিজাইন করা
আপনার সিভিতে যদি বহু ফন্টের সমাহার এবং প্রচুর বুলেটের ব্যবহার থাকে তাহলে তা নিয়োগকর্তার দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিতে পারে। আপনার সিভির মূল লক্ষ্য থাকবে চাকরিটির জন্য আপনি কতোটা যোগ্য তা তুলে ধরা। এখানে নিয়োগকর্তার দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়ার মতো কোনো বিষয় তুলে ধরা যাবে না।
এ কারণে সিভিতে রাখতে হবে পরিষ্কার একটি ডিজাইন। এতে থাকবে পরিষ্কার লাইন ও ঝরঝরে ফন্ট। এতে সামান্য পরিমাণ মানসম্মত রং ব্যবহার করে জব টাইটেলটি ভিন্ন করা যেতে পারে। কিন্তু বহু রং ও স্টাইলের ব্যবহার করা যাবে না।
এছাড়া ভাষাগত দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। একঘেয়ে ভাষার ব্যবহার বাদ দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ‘developed’ কথাটা বহুবার ব্যবহার। এতে পাঠক ঘুমিয়ে পড়তে পারে।
অগোছালো বিষয়ের সমাহার
অগোছালো সিভি নিয়ে আপনি কখনোই নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন না। আপনার সিভিতে বিক্ষিপ্ত বিষয় থাকলে অন্য প্রতিযোগীরা আপনাকে প্রতিযোগিতায় ‘নক আউট’ করে দেবে। সিভি দেখে নিয়োগকর্তা বুঝতে চাইবে আপনার নির্দিষ্ট যোগ্যতাগুলো। সিভিতে সামান্য পরিমাণে অস্পষ্টতাও থাকা চলবে না।
নিয়োগকর্তারা চায় আপনার অর্জন ও যতোটা সম্ভব তথ্য অল্প কথায় প্রকাশ করা। এতে আপনার অর্জনগুলো তারা আলাদা করে দেখতে চায়। আপনি যদি কোনো আর্থিক বিষয়ে বিশেষ কিছু অর্জন করে থাকেন, তাহলে তার অর্থমূল্য সরাসরি লিখে ফেলুন। ভাষা ভাষা তথ্য ব্যবহার করার চেয়ে এটা অনেক কাজে আসবে।
এক পাতায় অতিরিক্ত তথ্যের সমাবেশ
নির্দিষ্ট কোনো আকারের মধ্যে সিভি রাখতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ৭৭ ভাগ নিয়োগকর্তা মনে করে সিভি কমপক্ষে দুই পাতা হওয়া উচিত।
যদি সিভির আকার ছোট করতে হয় তাহলে আবেদনকারি প্রতিষ্ঠানের অনুরূপ যে চাকরি করেছেন, সেখানকার অর্জন, প্রধান দায়িত্ব ও প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট মূল্য সংক্ষেপে তুলে ধরতে হবে।
তারিখ বাদ দেওয়া
ভাবছেন সিভিতে উল্লেখিত বিভিন্ন চাকরির তারিখগুলো পরিষ্কার করে লেখার কি দরকার? আরেকবার চিন্তা করুন। সঠিক তারিখ বাদ দিলে নিয়োগকর্তা মনে করে আপনি কোনোকিছু লুকাতে চাইছেন। এ কারণে যে যে ক্ষেত্রে তারিখ দেওয়া দরকার সেখানে তা উল্লেখ করুন।
এক জরিপে দেখা গেছে, ২৭ ভাগ নিয়োগকর্তা সঠিক তারিখ ছাড়া সিভিকে ভুল সিভি হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং সেগুলো বাদ দিয়ে দেন।
দক্ষতাগুলো উল্লেখ না করা
আপনার নানা দক্ষতা হয়তো নিজের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে নাও হতে পারে। কিন্তু নিয়োগকর্তার কাছে এসব দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কম্পিউটারে কতোটা দক্ষ, টিমওয়ার্কে কতোটা সফল, বিদেশি ভাষায় কতোটা সাবলীল সিভিতে এসব ঠিকঠাক লিখতে ভুলবেন না।
এক জরিপে দেখা গেছে, ৩৫ ভাগ নিয়োগকর্তা সিভিতে দক্ষতার বর্ণনা না থাকায় সিভিগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ দিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে আলাদা একটি বিভাগ তৈরি করে সেখানে আপনার দক্ষতাগুলো উল্লেখ করতে পারেন।
সিভিতে চাকরির উদ্দেশ্য লেখা
অনেকেই সিভিতে Career Objective-এর মতো একটি পয়েন্টের উল্লেখ করেন। পয়েন্টটিতে লেখা থাকে ‘আমি ওমুক ধরনের পদে ক্যারিয়ার ডেভেলপ করতে চাই’ ইত্যাদি কথা। কিন্তু এখন সিভিতে এ পয়েন্টটির উল্লেখ করা একটি পুরনো বিষয় হয়ে গেছে। এতে দুটি সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, এটি আকর্ষণহীন বিষয়। দ্বিতীয়ত, এতে চাকরিপ্রার্থী কি চায়, এমন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চাকরিদাতারা প্রার্থী কি চায়, সে সম্বন্ধে মোটেও আগ্রহী নয়। তারা চায়, তাদের পদের উপযুক্ত একজন মানুষ খুঁজে বের করতে, যে তাদের প্রতিষ্ঠানের সমস্যা দূর করবে।
আপলোডেড বাই: অরণ্য সৌরভ