কৈশোরে স্তনে চাকা

অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী:
দশ বছরের ফ্রক পরা রীতামণি (ছদ্মনাম) একদিন ছুটে এলো মায়ের কাছে। বলল বুকে ব্যথা। মা বুকটি পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন, ওর স্তনবৃন্ত সামান্য ফুলে গেছে। ধরলে একটু ব্যথা করছে, সেই সঙ্গে হালকা গোটার মতো একটা কিছু ভেতরে আছে বলে মনে হচ্ছে। মা চিন্তিত হলেন- কোনো রোগ হলো নাকি! এটা বয়ঃসন্ধিজনিত কোনো পরিবর্তন? গেলেন ডাক্তারের কাছে।
কী হয়েছে মেয়েটির
মেয়েটির দেহের এই পরিবর্তন একজন কিশোরীর জীবনচক্রে স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রতিটি মেয়ের তলপেটে দুটি ডিম্বাশয় থাকে। কৈশোরে পা দিতেই এ ডিম্বাশয় ও অন্যান্য গ্রন্থি থেকে কিছু হরমোন নিঃসৃত হয় এবং বিশেষ বিশেষ হরমোন স্তন গঠনের কাজে নিয়োজিত থাকে। স্তনের বিভিন্ন অংশে এর বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই স্তনবৃন্তে ব্যথা, ফোলা ও সামান্য গোটার মতো মনে হয়। এটা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। এ জন্য মেয়েকে নিয়ে মায়ের অযথা চিন্তা করার কিছু নেই। তবে মাকেই চেষ্টা করতে হবে মেয়েকে আশ্বস্ত করার জন্য, যেন তাঁর কিশোরী মেয়েটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত না হয়। কৈশোরে মাসিক বা ঋতুস্রাব হওয়া শুরু হয়।
এ তো গেল একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু কিছু অস্বাভাবিক অবস্থাও হতে পারে একজন কিশোরীর স্তনে।
স্তনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্যে স্তনে চাকা একটা সাধারণ সমস্যা। কিশোরীর স্তনে সব ধরনের চাকা বা টিউমারের মধ্যে ফাইব্রোএডেনোমা প্রধান। ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই এ ধরনের চাকা হতে দেখা যায়। এ ধরনের চাকা যাদের হয়, তাদের বয়স সাধারণত ১৪ বছরের বেশি এবং এগুলো খুব কম ক্ষেত্রেই ক্যান্সারাস হয়। তবু হলেই তা ক্যান্সার নয় বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে মা-খালা, দাদি-নানি কারো স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে তখন একটু সচেতন হতে হবে।
স্তনে চাকার পরীক্ষা
সাধারণত গোসল করার সময় এ ধরনের চাকা বেশি ধরা পড়ে। বেশির ভাগ সময় এতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। কিন্তু কখনো কখনো মাসিকের সময় বা গর্ভবতী অবস্থায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এ রকমের চাকা সাধারণত গোটা ও কিছুটা রাবারের মতো হয়। আর ধরতে গেলে এদিক-ওদিক সরে যেতে থাকে। এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্তনের ওপর ও বাইরের দিকে হয়। সাধারণত এর আকার ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এ ধরনের চাকা পাওয়া গেলে শল্যচিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ছোট একটা অপারেশনের মাধ্যমে টিউমার বের করে বায়োপসি পরীক্ষা করা ভালো। কিছু কিশোরীর স্তনে বেশ ব্যথা হয়, যা ম্যাসটালজিয়া নামে পরিচিত। এ ধরনের ব্যথা কখনো কখনো মাসিকের সময় বা অন্য সময়ও হতে পারে। এ রকম ব্যথা অনুভূত হলে হালকা গরম সেঁক, অন্তর্বাস পরিবর্তন, ব্যথা নিরাময়কারী ওষুধ ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাইইউরোটিক বা হরমোন দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। তাই খুব ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তবে স্তনে চাকা হলে সচেতন থাকা ভালো। কাজেই প্রত্যেক কিশোরীর, বিশেষ করে নারীদের উচিত প্রতি মাসে নিজে নিজেই স্তনে গোটা বা চাকা আছে কি না পরীক্ষা করে দেখা।
অধ্যাপক, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।